নিছক প্রেমের গল্প – সুদীপ্ত বন্দ্যোপাধ্যায়

দু’আনা তার দুঃখ ছিল।
চোদ্দো আনা সুখ
জানালাপারের গন্ধমাখা।
চম্পাবরণ মুখ
সেও যদি যায় ঝাপসা হয়ে
সমীকরণ স্পষ্ট
দু’আনা তার সুখ বাঁচে ‘আর
চোদ্দো আনা কষ্ট

কন্যে মুখে কিছুই বলাে না
কন্যে তােমার সকল ছলনা

ডাইনির মতন চুল এলাে করে ওইভাবে জানালার পাশে বসে আছিস কেন? কী হয়েছে তাের, রাগ? আধ ঘণ্টা বসে আছি।
চুপ করে। চলে যাব?
রাগ করব কার উপরে?
ঠিক এই কথাটাই আমি জানতে চাইছিলাম। রাগ করছিস কার উপরে?
আমি রাগ করিনি। আমার কথা বলতে ভাল লাগছে না, আর কিছু বলবি?
না বলব না কিছু। আমি চললাম, তাের রােদ পােহানাে দেখার জন্য আমি বসে থাকতে পারব না।
কোথায় যাবি এখন?
জাহান্নামে, তােকে বলব কেন?
রাগলে তাের কানগুলাে বেগুনি হয়ে যায়, জানিস সেটা?
বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে কিন্তু!
একটা কবিতা শােনাবি?
পারব না।

চম্পাবরণ রােদ নেমেছে ঠিক দুক্কুরবেলা
চম্পাবরণ কন্যে তােমার চক্ষে মেঘের খেলা

শাড়িটা পরে তােকে বেশ কেমন একটা ইয়ে লাগছে।
ইয়েটা কী? জঘন্য লাগছে বলতে বাধছে বুঝি? তাের মুখেও কিছু আটকায় তা হলে!
জানিস না, বড়রা কি বলেছেন, “সত্যম ব্রুয়াত, প্রিয়ম বড়ুয়া”।
অপ্রিয় সত্য বলতে নেই আসলে।
জঘন্য লাগছে তাে?
আমি কি তাই বললাম? আসলে শাড়ি পরে তােকে অন্যরকম লাগছে। বিকেলবেলার রােদটা সরে গেলে বােধ হয় তােকে আবার তাের মতন লাগবে।
এখন কার মতন লাগছে?
তাের মতনই, তবু যেন তুই নয়। আচ্ছা, তাের চুলগুলাে কি মেঘবরণ?
রাজকন্যা বলছিস আমাকে?
তাই কখনও বলতে পারি! রাজা-গজার খুব আকাল দেশে। শেষ অবধি রাজপুত্তুর জোটাবি কোথা থেকে?
রাখাল ছেলে কি জুটবে না এক-আধটা?
ঠাকুরমার ঝুলি হাতড়ে দ্যাখ, পেতেও পারিস। আসলে তাকে বোধ হয় খুব সুন্দর লাগছে আর মনে হচ্ছে তুই অনেক দূরে।
ট্রাম লাইনের উপরে, ওটা কী পাখি রে?
কাক নয়, চড়ুই, শালিখও নয় দেখছি। এই শহরে পাখি বলতে আর একটাই।
ওটা মন পাখি।

Read:  আমাকে ভালোবাসার পর – হুমায়ুন আজাদ

চোখের কোণে মুকুতা দোলে হাসলে করে আলাে
নীলাম্বরী উপচানাে তার কেশের বরণ কালাে

কনুইতে ব্যান্ড-এজ লাগিয়েছিস কেন?
কেটে গেছে।
কাটল কী করে?
একটা কঠিন ক্যাচ নিতে গিয়ে।
এখনও ক্রিকেট খেলে যাচ্ছিস? পরীক্ষার ক’টা দিন বাকি?
পরীক্ষার সঙ্গে ক্রিকেটের সম্পর্ক যে ব্যস্তানুপাতিক সেটা জানা ছিল না তাে!
সেভেনথ পেপারের প্রিপারেশন কেমন হয়েছে?
ফেল করব ওটাতে।
আর এইটথ পেপার?
ডাহা ফেল।
বলতে একটুও লজ্জা করছে না
আমার মতন খারাপ ছাত্র কিছু না থাকলে ক্যালকাটা ইউনিভার্সিটি যে লাটে উঠবে। বছর বছর একজামিনেশন ফিজ দিয়ে টিকিয়ে রেখেছি তাে আমরাই।
ক’ঘন্টা পড়ছিস দিনে?
সারা রাত। সকালে প্রথম ট্রামটাকে রওনা করে দিয়ে তবে ঘুমােতে যাই।।
সারা রাত পড়ছিস?
সারা রাত জাগছি অন্তত।
কী করিস, সারা রাত জেগে?
ঘুমিয়ে পড়লে কলকাতা শহরকে খুব বােকা বােকা লাগে। ল্যাম্পপােস্টগুলাে হাই তােলে মাঝে মাঝে। আমার পড়ার টেবিলের সামনে যে জানলাটা,
ওটার ঠিক উল্টোদিকের রাস্তায় একটা টিউবওয়েল আছে। ওইটা ঘুমের মধ্যে খুব ককথা বলে। তখন নেড়িগুলো এইসা ধমক লাগায় কী বলবো!
সারা রাত এইসব পাগলামি?
পাগলামি কেন হবে, এ ছাড়াও পরীক্ষায় পাস করার জন্য কত কসরত করি। কাল রাতেই খাতা ভর্তি করে তাের নাম লিখেছি, প্রতি পাতায় ১০৮ বার।
কেন?
তাের মতন ভাল ছাত্রী আমাদের ডিপার্টমেন্টে আর আছেটা কে? যদি তাের নাম জপ করে উতরে যাই কোনওমতে।
শুধুই তাই?
না, এছাড়াও আছে। তাের নামটা লিখলে বেশ লাগে দেখতে।

কন্যে কন্যে চম্পাবরণ
কাজল চক্ষু বশীকরণ

পরীক্ষার পরে কী করবি?
ইচ্ছে আছে জেএনইউতে পড়ার। তুই কিছু ভেবেছিস?
ভাবার কিছু নেই তাে। পরের বার পরীক্ষা দেবার জন্য আবার তৈরি হব।
তুই সত্যি দিল্লি চলে যাবি?
যদি সুযােগ পাই, যাব।
পারবিই না যেতে। কাকু কিছুতেই তাের মতন একটা পুঁচকে মেয়েকে দিল্লিতে একা থাকতে দেবেন না।
আমি তাের থেকে তিন সপ্তাহের বড় বয়সে এটা মনে রাখিস। আর দিল্লিতে একা থাকব কেন? মাসির বাড়ি আছে তাে।
কেন, মাসি দিল্লিতে থাকেন কেন? আর জায়গা পেলেন না থাকার!
মাসির দিল্লিতে থাকার কারণটা খুব সহজ। মেসােমশাই থাকেন ওইখানে তাই। কিন্তু তাের এত রাগ কেন দিল্লির উপরে?
তুই দিল্লিতে যেতে চাইছিস কেন?
পড়াশুনাে করবার জন্য।
পড়াশুনাে করার জন্য কলকাতা ছেড়ে চলে যাবি?
হ্যাঁ যাব।
তুই জানিস, তুই চলে গেলে কলকাতা শহর মুখ গােমড়া করে বসে থাকবে, ভিক্টোরিয়ার পরি ঘুরবে না আর ফুচকাওয়ালারা কবিরাজি ওষুধের কোঅপারেটিভ স্টোর খুলবে?
আর তুই কী করবি?
তাের সঙ্গে আমার কী? আমি কিছুই করব না।করব নাই বা কেন? সারাদিন ক্রিকেট খেলব, রােজ বিকেলে দুটো করে এগ রােল খাব সেনাপতির দোকান থেকে আর সারা রাত্তির ফুটপাথের সাথে গল্প করব। যা ইচ্ছে করব, যা খুশি করব। কী দরকার তাের এত পড়াশোনা করার শুনি?
তুই সারাদিন ক্রিকেট খেলবি, সারা রাত ফুটপাথের সঙ্গে গল্প করবি, বছর বছর পরীক্ষা দিবি, যা ইচ্ছে করবি। আমি যদি পড়াশােনা করে
চাকরি না করি, রােজ বিকেলে তােকে দু’টো করে এগ রােল খাওয়াবে কে?

Read:  কেউ কথা রাখেনি – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
Share

admin

Enformation is going to be used for enormous purpose that's can be flourish our knowledge of glamour world, health tips, social condition. And also global issue, entertainment, sports, travel, music, friends, Indian history, and many more. From here people will know more about their place from the information.

You may also like...